মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তারা।
বেরিয়ে এসে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, মৃত্যু ভয়ে ভীত নন মীর কাসেম আলী। সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারা ফটকে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছি। উনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন। তিনি বলেছেন, এ মৃত্যু শহীদী মৃত্যু। যারা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছে তাদের পরাজয় হবে। এদেশে একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে।
পরে মীর কাসেম আলীর স্বজনরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এর আগে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার পরিবারের ৪৩ সদস্য কারাগারে যান। চার দফায় ৩৮ জনকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেন কারা কর্তৃপক্ষ।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে তারা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ফটকে পৌঁছেন। এর পাঁচ মিনিট পর কারা কর্তৃপক্ষ সবাইকে কারাগারের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন।
স্বজনদের সঙ্গে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনও ছিলেন।
সূত্র জানায়, কারাকর্তৃপক্ষ মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার জন্য ডেকে পাঠান।
এর আগে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল করিম কাশিমপুর কারাগারে যান। সেখানে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।
ফাঁসি কার্যকরের সময়-ক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে আজই যে ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।
ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিতকরণে চিঠি পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে মীর কাসেম আলীর গ্রামের বাড়িতেও।
কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করতে বিপুল সংখ্যক স্বজনের উপস্থিতি, ফাঁসির নির্বাহী আদেশ কারাগারে পৌঁছে দেয়া, কড়াকড়ি নিরাপত্তা, পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চে তৃতীয় দফা ও শেষবারের মতো মহড়া সম্পন্ন করা- এসবই জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের জানান দেয়।
মানবতাবিরোধী মামলায় এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করার এ ধরনের প্রস্তুতির বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আর কোনো আসামির ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়ের সাক্ষাতের সময় এত বিপুল সংখ্যক পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়নি। মীর কাসেম আলীর ক্ষেত্রে তা দেখা গেল।
এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ। বিকেলে আরো অতিরিক্ত ৪ প্লাটুন বিজিবি কারাগারের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কাশিমপুরের দুটি কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শেষবারের মত জল্লাদদের মহড়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। যাদের দিয়ে মহড়া সম্পন্ন করা হয়েছে তারা হলেন জল্লাদ দীন ইসলাম, শাহজাহান ও শাহীন।
এ প্রসঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, সরকারের আদেশ পেলে যেকোনো একটি মঞ্চে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।