স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনায় ঘটনার পুলিশের দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ না করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই ঘটনা তদন্ত করে আগামী ৩ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ৯ নভেম্বর পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনায় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ কে এম সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবি করলেও ওই ঘটনায় এই সংসদ সদস্যের কোনো দোষ পায়নি পুলিশ।
এই শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করাতে নির্দেশ দিতে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্যকে দেখা গেলেও তিনি ‘পরিস্থিতির শিকার’ বলে হাইকোর্টে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় কাউকে জড়িয়ে কারও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেছেন, এজন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়।
ওই ঘটনার ভিডিওতে ওই শিক্ষককে কান ধরে উঠ বসের নির্দেশ দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে দেখা গেলে তার শাস্তির দাবিও উঠে। তবে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন।
ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তর্র্বতীকালীন আদেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশনায় ২৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা দায়সারা বলে অসন্তোষ জানিয়েছিল আদালত।
এরপর ৮ জুন জেলা প্রশাসক নতুন করে প্রতিবেদন দেন হাইকোর্টে। ওই ঘটনায় জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে অগ্রগতি আছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি ৬০ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন।
আদালত তখন স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় করা জিডির তদন্তে আসা ফল হলফনামা আকারে ৪ অগাস্ট আদালতে দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়।
ওই প্রতিবেদন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ওই প্রতিবেদনটি দাখিল ও পড়ে শোনান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। অন্যপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিষদ বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, “স্থানীয় সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান ওই দিন ১৫.৪৫ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে উত্তেজিত জনতা প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচারের দাবিতে পুনরায় উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে।
“তখন পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার সময় প্রধান শিক্ষককে জনগণের রোষানল থেকে রক্ষার জন্য উত্তেজিত জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কান ধরে ওঠ-বস করার ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটে।”
“ওই ঘটনার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দুজনই উদ্ভূত ঘটনায় পরিস্থিতির শিকার। ওই ঘটনা সংক্রান্তে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট (পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়) কারোই কারও বিরুদ্ধে কোনোরূপ অভিযোগ না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় আকস্মিকভাবে ওই ঘটনাটি হয়েছে বলে জানা যায়।”