নিউজ প্রতিদিন ডটনেট: ব্যাপক প্রচার প্রসার ও আলোচনায় ছিলো ডেমরা, শারুলিয়ার গতকালকের মাহফিল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের।
মাসব্যাপী প্রচার, মাইকিং, পোস্টার, হ্যান্ডবিল, প্যান্ডেল করার পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসে বাধা দিয়ে বলা হয় মাহফিল এখানে করা যাবে না। প্রশ্ন হলো কেন?
যেখানে বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় গান বাজনা হচ্ছে, ডিজে পার্টি হচ্ছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে বাধা দেয়া হয় না; সেখানে একটি মাহফিলে কেনো এরকম সারাশী অভিযানের মাধ্যমে বাধা দেয়া হবে? তাহলে তো বুঝা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে আলেম উলামা ও ইসলামপন্থীরাই পরাধীন। তা আর কতদিন? আর কতদিন এদেশের মুসলমান তা সহ্য করবে?
যদি প্রশাসনের কাছ থেকে শর্ত অনুযায়ী অনুমতি না নিয়ে থাকে কমিটি মাসব্যাপী প্রচারণার শুরুতেই তো বাধা দেয়া যেত, তাতে তো লক্ষ লক্ষ টাকা কমিটির খরচ হয় না। যেখানে এলাকার যুবকরা এতো পরিশ্রম করে, শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মাহফিলের এরেঞ্জমেন্ট করেছে। এরপর মাহফিলের মাত্র ১ দিন পূর্বে বন্ধ করে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক এবং মানবিক?
এবং এটা কোন পর্যায়ের অপরাধ, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের, স্থানীয় প্রশাসনের ও এলাকাবাসী মুসলমানদের। কারন এখানে উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, যুবসমাজ যেন ওয়াজ মাহফিল থেকে নিরুৎসাহিত হয় এবং প্রকারান্তরে ডিজে পার্টি, অপ-সাংস্কৃতি, জুয়ার আসর সহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসায়। এই বিষয়গুলো এখনই আলেম উলামা ও পীর মাসায়েখদের নজরে আনা জরুরি।
গভীর নিরীক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মাহফিল বন্ধের কারন হিসেবে (দায়ী) তিনটি অভিমত পাওয়া যায়:
১/ স্থানীয় সংসদ সদস্য, সজল মোল্লা। যিনি প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে। তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে না রাখাতেই প্রশাসনকে বাধ্য করে মাহফিলটি বন্ধ করিয়েছেন। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এম.পি সজল মোল্লা চরম হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে এবং এই এলাকার জনমানুষের প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতাই হারিয়েছে। তারা বাবা হাবিবুর রহমান মোল্লার ব্যাপারেও বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ইসলামিক বক্তা, স্কলারদের বসিয়ে সে ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তব্য রাখতো, যাতে মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত ছিলো। তার ছেলে সজল মোল্লা এরকম না করলেও যখন তখন সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে মাহফিলে কর্তৃত্ব এবং হস্তক্ষেপ করবে, এটা কখনোই হতে পারে না। একজন সংসদ সদস্যের কাজ কি মাহফিল বন্ধ করা? প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করা? তাহলে বাক স্বাধীনতার যে দোহাই দেয়া হয়, মানবাধিকারের কথা সকল রাজনৈতিক দলগুলো বলে থাকে, সবই কি মুখরোচক স্লোগাম? ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়? নতুবা যেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলো, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলো, সেখানে ১ মাস প্রচারণার পর ১ দিন আগে মাহফিল বন্ধ করে দেয়া ইসলাম বিরোধী, ইসলামী আইনের চোখে চরম অপরাধী এবং বর্তমান রাষ্ট্রীয় আইনেও সমান অপরাধী। একজন সংসদ সদস্য কখনোই এধরণের হীন চক্রান্ত করতে পারে না, শুধুমাত্র তার নাম না থাকার কারনে। আসলেই সজল মোল্লা মাহফিল বন্ধ করলেন কিনা, সে বিষয়টি তাকে স্পষ্ট করতে হবে।
২/ ২য় যে অভিমত পাওয়া যায়, তা হলো: ডেমরা জোনের যিনি ডি.সি, তিনি ওসির মাধ্যমে মাহফিলটি বন্ধ করিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেনো? আর এই ডি.সি কোন পন্থী? সে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েছিলো মাহফিল বন্ধের আগে? হতে তো পারতো, মাহফিল বন্ধের কারনে এলাকায় যুবকরা রোড-ঘাট বন্ধ করে, হরতাল অবরোধ করে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে। ডি.সি কি তখন এর দায়ভার নিতো? দায়ভার তো পুরোটাই আসতো সরকারের উপর। এমনিতেই তো এলাকায় সাধারণ জনগন ছি ছি করছে, সেটা পুলিশ কিংবা ডি.সি কে নয় বরং আওয়ামী সরকারের প্রতি। কান্ডজ্ঞানহীন এধরণের পুলিশ কিংবা ডি.সি অফিসারের কারনে আওয়ামী সরকার জনগণের আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলছে।
অতএব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের আবেদন এটাই, ডি.সি স্ব প্রনোদিত হয়েই কাজটি করলো? নাকি এম.পির কথায় করলো; তা যেন যাচাই করা হয়। প্রশানের লোক তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা যদি জনগণের সেবা বাদ দিয়ে এম.পি মন্ত্রীদের কথায় ওঠবস করে, তাহলে তো প্রশাসনিক পোশাক খুলে ফেলে আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক দলে নাম লেখানো উচিত।
৩/ ৩য় যে মত পাওয়া যায়, তা হলো: এলাকার লেবাসধারী কিছু মুনাফিক, ভন্ড মৌলভী; যারা মাহফিলটিতে বাধা প্রদান করেছে।
যদি এটাই হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে দায়টা আসে দারুন নাজাতের প্রিন্সিপাল আ.খ.ম আবু বকর সিদ্দিক সাহেবের উপর। কারন তিনি সে এলাকার মুরুব্বি হিসেবে সেই দুনিয়াদার, দুষ্ট আলেমদেরকে এই হীন কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতেন। আবু বকর সিদ্দিক সাহেব যদিও আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, তথাপিও এলাকার প্রায় সকল প্রোগ্রামেই তাকে দাওয়াত করা হয়ে থাকে। তিনি নিজেও উক্ত প্রোগ্রামে দাওয়াতী মেহমান ছিলেন। কেউ কেউ এটাও বলছেন যে, দারুন নাজাতের প্রিন্সিপাল’ই মাহফিলটি এম.পির মাধ্যমে বন্ধ করিয়েছে। কারণ, এ মাহফিল যদি হতো, আর সে যদি উপস্থিত হতো তবে ছারছিনা পন্থী এ প্রিন্সিপাল তার পীরের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আর যদি পীরের মন রক্ষা করতে যেয়ে মাহফিলে না আসতো, তবে এলাকাবাসীর কাছে সে ধিক্কারের পাত্র হতো। এ উভয় সংকট থেকে বাচার জন্যই, অনেকের মতে দারুন নাজাতের ধুরন্ধর, চালবাজ ব্যবসায়ী প্রিন্সিপাল এ কাজটি করতে পারেন। বাকি সময়’ই বলে দিবে, এর পিছনে কারা দায়ী।
এ হীন চক্রান্ত যারাই করলো, তারা একটি অপসংস্কৃতি চালু করলো। পরবর্তীতে কেউ মাহফিল করতে গেলে এ যুবকরাই মাহফিলে বাধা দিবে। কারন তারা এতো পরিশ্রম করে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাহফিলের আয়োজন করা সত্ত্বেও মাহফিলটিতে যারা বাধা দিয়েছে, তারা ইসলামিক দৃষ্টিতেও একটি জঘন্য অপরাধ করেছে, প্রচলিত আইনেও অনেক বড় অপরাধ করেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।