অনেকেই তাবলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের কারন জানতে চাইছেন, তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত ভাবে সংঘর্ষের কারন বর্ননা করা হলঃ সংঘর্ষের মূল চরিত্র বা দায়ী অনেক টা ভারতের নিজামউদ্দিনের মাওলানা সা’দ ই। কেননা তিনি কুরআন ও হাদিস নিজের মনগড়া ব্যাখা প্রদান করছেন আর উনিই তার কথাকেই চূড়ান্ত বলে দাবি করছেন। তার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম স্বর তোলেন ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা। তারপর আসতে আসতে সমগ্র ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্থান সহ বিশ্বের সকল ওলামায়ে কেরাম তার মিথ্যাচারের বিরুদ্ধ স্বর তোলেন আর এবং তাকে তাকে দাওয়াতে তবলীগের মুরব্বী থেকে বাজেয়াপ্ত করেন। কিন্তু মাওলানা সা’দ নিজেকে একা একাই মুরব্বী দাবি করছেন এবং তিনি ও তার অনুসারীরা এখন আলাদা ভাবে তাবলীগের মেহনত শুরু করেছেন। উনি সম্পূর্ন ওলামায়ে কেরামদের সমাজের বিরুদ্ধে চলছেন ও উল্টা-পাল্টা ফতোয়া দিচ্ছেন আর উনার অনুসারীরাই আজ কয়েকদিন যাবত টঙ্গীতে জোট হয়ে জোড় করছেন।। তাই আজ তাদের হটাতে আজ এ সংর্ঘষ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের সাথে থাকব আমরা ?? সমস্ত ওলামায়ে কেরামদের সাথে নাকি একা একা নিজেকে জামাতের নেতা মনে করা সা’দ সাহেবের সাথে উলামায়ে কেরামকে এড়িয়ে চললে দ্বীনের কোন শাখাই শংকামুক্ত থাকবে না
।। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক (হাফি.) ।।
[গত ১১ নভেম্বর শনিবার উত্তরা ১৪নং সেক্টর মসজিদে আয়েশা সংলগ্ন মাঠে মাওলানা সা’দ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ জামাতের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নির্ধারণে অনুষ্ঠিত ওলামায়ে কেরামের সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র মুহাদ্দিস আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক (হাফি.) যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, তার পুণর্বিবরণী উম্মাহ্ ২৪ডটকম-এর পাঠকদের জন্য নিম্নে পত্রস্থ করা হল]
* দ্বীনের সমস্ত শখা-প্রশাখার মাঝে কেবল ইলমে অহীর ধারক বাহকদেরকেই ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া বলা হয়েছে। অন্য কোন শাখার ধারক বাহককে বলা হয় নাই।المجاهدون ورثة الأنبياء অথবা الدعاة ورثة الأنبياء বলা হয় নাই। কেবল উলামায়ে কেরামের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে- العلماء ورثة الأنبياء
* উলামায়ে কেরাম হলেন সেনাবাহিনীর মত। সেনাবাহিনী থাকলে যেমন দেশ সুরক্ষিত থাকে। সেনাবাহিনী না থাকলে দেশ অরক্ষিত হয়ে যায়। অনুরূপ উলামায়ে কেরাম থাকলে দ্বীন সুরক্ষিত থাকবে। উলামায়ে কেরাম না থাকলে দ্বীন অরক্ষিত হয়ে যাবে। উলামায়ে কেরামের দিকনির্দেশনা মেনে চললে পীর সাহেবের পীরগিরীও ঠিক থাকবে। তাবলীগওয়ালাদের তাবলীগও ঠিক থাকবে। পক্ষান্তরে উলামায়ে কেরামকে যদি এড়িয়ে চললে দ্বীনের কোন শাখা বেদাত ও কুসংস্কার থেকে নিরাপদ থাকবে না।
* উলামায়ে কেরামের দিকনির্দেশনা মেনে না চললে পীর মুরিদরা যিকির করতে করতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে। সমাজ সেবকরা সমাজসেবা করেও মুক্তি পাবেন না। তাবলীগীরা তাসবীহ পড়ে পড়েও নাজাত পাবে না।
* মুফতী আব্দুর রহমান (রাহ.) বলেন, আমি শায়খুল হাদীস যাকারিয়া (রাহ.)এর কাছে আরজ করলাম যে, আমি তাবলীগে সময় দিতে চাই। হযরত (রাহ.)বললেন- تعلیم سے لگے رہو۔ تبلیغ سے جوڑے رہو দরস ও তাদরীসের সাথে লেগে থাকো। আর তাবলীগের সাথে মিলে থাকো।
* আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (হাফি.) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মাঝেমধ্যেই ওয়াহিদুয জামান (রাহ.)এর বাণী উল্লেখ করে থাকেন। তিনি বলতেন- تقسیم کار ہوگی نہ کہ تقسیم افکار অর্থাৎ- কাজের বিন্যাস হবে। কিন্তু চেতনার বিরোধ হবে না।
যেহেতু একক কোন ব্যক্তির পক্ষে দ্বীনের সকল শাখায় সামাল দেয়া কঠিন তাই কাজের বিন্যাসের জন্য দীনের কাজসমূহকে শাখায় শাখায় বিন্যস্ত করা হয়েছে। কতিপয় উলামায়ে কেরাম পীর মুরীদীর মাধ্যমে তাসাউফ চর্চা করছেন। সাধারণ মানুষদেরকে অহেতুক কাজ থেকে ফিরিয়ে মাওলার সাথে জুড়িয়ে দিচ্ছেন। কতিপয় দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করে ধর্ম মুর্খদেরকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসছেন। কালেমা, নামাজ জাতীয় প্রাথমিক কর্তব্য শিখিয়ে দিচ্ছেন। আবার আরো কতিপয় উলামায়ে কেরাম কুরআন ও হাদীসের উপর গভীর পান্ডিত্য অর্জন ও নিবীড় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য শাখার ব্যক্তিবর্গ কোথাও ঠেকে গেলে এ সকল উলামায়ে কেরাম যেন তাদেরকে কুরআন হাদীসের আলোকে সঠিক পথনির্দেশ করতে পারেন।
উলামায়ে কেরাম দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক শাখা তথা ইলমে ওয়াহীর দরস ও তাদরীসের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পক্ষে একই সময়ে অন্যান্য শাখাগুলোতে সমানতালে শ্রম দিয়ে যাওয়া স্বভাবতই অস্বম্ভব। কিন্তু একথা তাঁদের আলবৎ জানা আছে যে, তাবলীগ, সিয়াসত, তাসাউফ সবই আমাদের কাজ।
এজন্য আমরা তাবলীগের মুরব্বিদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা যেভাবে জনসাধারণের দরজায় দরজায় গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন। এটা মূলত আমাদেরই কাজ ছিল। কিন্তু আমাদের কাছে সেই সময় না থাকার কারণে আমরা এই মহান কাজে শরিক হতে পারছি না। অনুরূপ হক্কানী পীর সাহেবগণও প্রশংসার দাবি রাখেন। কেননা আমাদেরই দায়িত্ব ছিল সমাজ থেকে বেদাতী পীরদের ভণ্ডামি নস্যাৎ করা। সঠিক তাসাউফ চর্চার মাধ্যমে উনারা সেই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
এভাবে ইসলামের প্রতিটি শাখা প্রশাখাকে আলাদা আলাদাভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরা সেই বিভাগকে সুচারুরূপে পরিচালনা করে আসছেন।
কিন্তু দ্বীনের কোন শাখায় যখনই কোন অসংগতি দেখা দেয় কিংবা কোন প্রকারের ভ্রান্তির অনুপ্রবেশ ঘটে তখন উলামায়ে কেরাম বসে থাকতে পারেননা। তাঁরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে গর্জে ওঠেন। এটা তাঁদের মৌলিক দায়িত্বেরই অন্তর্ভুক্ত।
কালামে এলাহী আর কালামে রাসূল চর্চা করতে করতে আমাদের তবিয়ত এমন হয়ে গেছে যে, ইসলামের সুরক্ষিত প্রাসাদে কোন বাতিল পন্থিদের অশুভ দৃষ্টি পড়লে আমরা সেটা মেনে নিতে পারিনা। সাথে সাথে তা প্রতিহত করার জন্য যা কিছু করতে হয় সবকিছু করার জন্য আমরা প্রস্তুত হয়ে যাই।
আমরা যেভাবে দ্বীনের অন্যান্য শাখার মাঝে ভ্রান্তি মেনে নিতে পারিনা। অনুরূপ তাবলীগ জামাতের মাঝেও যদি ভ্রান্তবাদীদের কুদৃষ্টি পড়ে তাহলে সেটাও আমরা কোনভাবেই বরদাশত করতে পারবো না। অন্যান্য শাখাগুলিকে শুদ্ধি করা যেমন আমাদের উপর ফরয তেমনি তাবলীগ জামাতকেও ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা আমাদের উপর ফরয।
চলমান ইস্যুতে আসা যাকঃ
আজ পর্যন্ত কখনোই উলামায়ে কেরাম তাবলীগ জামাত নিয়ে মাথা ঘামাননি। দাউদ হায়দার, সালমান রুশদীর, তসলিমা নাসরীন ও হিন্টসের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। যারা রাজনীতিতে সক্রিয় তারা সরকারের ভুল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু দাওয়াত ও তাবলীগের কোন বিষয় নিয়ে আমরা কখনো বসিনি। কারণ এ ব্যাপারে ফিকির করার জন্য আলাদা এক জামাত আছে। ইতিপূর্বে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার নামে মিস্টার আবুল আলা মওদুদী সাহেব কুরআনে কারীমের বিকৃত অনুবাদ, আপন ইচ্ছানুরূপ ব্যাখ্যা, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের দোষত্রুটি ধরা, বুযুর্গানে দ্বীনের তাচ্ছিল্য করা আর নিজস্ব আঙ্গিকে মাসআলা বর্ণনা করার মাধ্যমে নতুন এক মতবাদ আবিষ্কার করেছিলেন। বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে বড় বড় উলামায়ে কেরামও এই মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। তন্মধ্যে হযরত আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.), মাওলানা মনযূর নু’মানী (রাহ.) সহ প্রথম সারির বিশাল এক জামাত মওদুদী সাহেবের সাথে একাত্ম হয়েছিলেন। অতঃপর ’৪৭ এ যখন ভারত পাকিস্তান ভাগ হল। মওদুদী সাহেব লাহোর চলে গেলেন। ওখানে একটি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলেন। যখন তিনি উন্মুক্তভাবে নিজের মতবাদ বাস্তবায়নের সুযোগ পেলেন। তখন ধীরেধীরে তাঁর ভ্রান্তিগুলো উলামায়ে কেরামের কাছে প্রকাশ পেতে শুরু করল। অবশেষে দেখা গেল জামাতে ইসলামি প্রতিষ্ঠার সময় ৮০ জন উলামায়ে কেরামের যে বিশাল জামাত তার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সকলেই একে একে বেরিয়ে পড়েন। ইসলামী হুকুমতের নামে ভ্রান্ত মতবাদকে আমাদের আকাবির উলামায়ে কেরাম সহ্য করেননি। তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে ইসলাম বিকৃতি আমরা কীভাবে সহ্য করতে পারি? যেভাবে পীরালীর মাধ্যমে নকশবন্দিয়া আর চিশতিয়ার নামে ভণ্ডামি চালিয়ে দেওয়া আমরা বরদাশত করতে পারি না। ঠিক সেভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে ভণ্ডামি আর ভ্রান্ত মতবাদ আমরা সহ্য করতে পারবো না। আমরা সেটাকে অবশ্যই প্রতিহত করবো।
আজ থেকে প্রায় দশ বছর পূর্বে মাওলানা সা’দ সাহেব সাহারানপুরে আলোচনায় উলামায়ে কেরামের বেতন নিয়ে পড়ানোর ব্যাপারে বললেন- এই টাকা বেশ্যাদের উপার্জনের সমতুল্য। তখন মাজাহিরুল উলূমের মজলিসে ইলমী বসে মাওলানা সালমান সাহেবের সভাপতিত্বে রেজুলেশন হইল যে, সা’দকে কখনো বয়ান করতে দেয়া যাবে না।
যেসময় সা’দ সাহেব তার মতাদর্শ প্রচার করা শুরু করলেন তখন লাগামহীনভাবে প্রত্যেকটি বয়ানে অপব্যাখ্যা শুরু করলেন। টঙ্গি ইজতেমায়ও তিনি অসংখ্য ভ্রান্তি প্রচার করেছেন। আমরা কাকরাইলে এর রিপোর্টও পেশ করেছি।
ধীরে ধীরে উনার ভ্রান্তি আক্বাইদের পর্যায়ে চলে গেছে। ইতিপূর্বে তিনি ব্যাখ্যায় ভুল করে আসছিলেন। কিন্তু এখন ব্যাপার এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তিনি আক্বাইদের উপরও হস্তক্ষেপ করছেন। জমহুর মুফাসসিরীনে কেরামের বিপক্ষে গিয়ে নতুন মতবাদ কায়েম করতে চাচ্ছেন।
বহুকাল থেকে কওমী মাদরাসা আর দাওয়াত ও তাবলীগ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব মাথা ঘামাচ্ছে। যে, এই দুই সিস্টেম যতদিন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত আছে ততদিন পর্যন্ত মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব নয়। এ নিয়ে চব্বিশ ঘন্টা তারা ফিকিরে আছে যে, কিভাবে এদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করা যায়। কিভাবে এদেরকে সমাজে কলঙ্কিত করা যায়। আল্লাহ তা’য়ালার শুকুর যে, মাওলানা সা’দ সাহেবের ব্যাপারটা ইতিপূর্বেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তিনি কোন এজেন্সির জন্য কাজ করছেন। এজন্যই তো হাজার বুঝানোর পরও বুঝতে চান না। বিজ্ঞ আপন লোকদের পর্যন্ত দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। ইসলাম বিরোধিতায় এত সংকল্পবদ্ধ কেন? দারুল উলূম দেওবন্দে কেবল সা’দ সাহেব সম্পর্কে গোটা বিশ্ব থেকে প্রশ্নের ঢের তৈরি হয়েছে। এরপর দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে সা’দ সাহেবকে দেওবন্দে আসতে বলা হয়েছে। (আশচর্যের বিষয় যে, তিনি লাইফে কখনো দারুল উলূম দেওবন্দে যাননি। কত দুর্ভাগা হলে এমন হয়!!) এরপর যখন বারবার তলবের পরও তিনি আসতে অপারগাতা প্রকাশ করছিলেন তখন দেওবন্দের পক্ষ থেকে বলা হল- ঠিক আছে। আমরা আমাদের আমাদের জিম্মাদারি আদায় করে যাব।
একথা শুনে তিনি মাওলানা আহমদ লাট সাহেবকে দেওবন্দে পাঠিয়েছেন। দেওবন্দের মেহমানখানায় তাঁর সাথে মাওলানা আবুল কাসিম নু’মানী (মুহতামিমে দারুল উলূম), সাঈদ আহমদ পালনপুরী (শায়খুল হাদীস), আরশাদ মাদানী ও হাবীবুর রাহমান খায়রাবাদী (প্রধান মুফতি) সহ সিনিয়র সকল আসাতিযায়ে কেরামের সাথে বৈঠক হল। শুরুতেই দেওবন্দের পক্ষ থেকে সা’দ সাহেবের কিছু ব্যাপার উল্লেখ করা হল। আহমদ লাট সাহেব তখন প্রায় আধাঘণ্টার মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন। শেষে বললেন, এসব তো আপনাদের পর্যন্ত যা পৌঁছেছে তা, আমাদের চোখের সামনে তো আরো কত কী ঘটে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। এখনো মারকাযে ইবরাহীম দেওলা সাহেব, ইয়াকূব সাহেব সহ প্রবীণ মুরব্বিয়ানে কেরাম অবস্থান করছেন। আপনারা যদি হুকুম দেন মারকায ছেড়ে চলে যেতে তাহলে আমরা চলে যেতে প্রস্তুত। উনাকে কন্ট্রোল করা এখন আমাদের ক্ষমতার বাহিরে। এসকল কর্মকাণ্ড দেখে দেখে এখানে থাকার আর ইচ্ছা নেই। এটা শুধু আমার কথা নয়। বরং মুরব্বিয়ানে কেরামের বিরাট এক জামাত আছেন যাদের কথা হলঃ দেওবন্দ থেকে যদি থাকতে বলা হয় তাহলে থাকব। যদি বলা হয় চলে যেতে তাহলে চলে যাব। যাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় নিজামুদ্দীনে কাটিয়েছেন। তাদের মাঝে এমনও লোক আছেন যারা পঞ্চাশ ষাট বছর যাবৎ দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানে কাজ করে আসছেন। যারা কেবল এনামুল হাসান সাহেব নন বরং মাওলানা ইউসুফ সাহেব (রাহ.)এর আমল এই কাজের সাথে লেগে আছেন। যারা মাওলানা সা’দের উস্তাদ এবং উনার বাবা মাওলানা হারুনেরও উস্তাদ। মাওলানা আহমদ লাট সাহেবের এই কথার পর দেওবন্দ থেকে তাঁকে বলা হল, আপনারা মারকাযেই থাকেন। কী হয় দেখা যাক। এদিকে মাওলানা সা’দ সাহেব চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিলেন যে, যদি কথায় ভুল থেকে থাকে তাহলে আহমদ লাট সাহেব, ইবরাহীম দেওলা সাহেব সহ মারকাযের উলামায়ে কেরাম আমাকে সতর্ক করতেন। তাঁরা তো আমাকে কিছু বলছেননা। অথচ বাস্তবতা হল যে, উনাকে বারবার বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুরব্বিয়ানে কেরাম যখন দেখলেন যে, উনার মতবাদসমূহ আমাদের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন তারা নিজামুদ্দীন মারকায ত্যাগ করে চলে গেলেন।
গত বছর মক্কা মুকাররামায় সেখানকার মুরব্বিদের সাথে সাক্ষাৎ হল। তাঁরা উনার সামনে সমসাময়িক বিষয়গুলো উপস্থাপন করে সমাধানের উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়া আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি তাদেরকে সাধুবাদ জানান। কিছুদিন পর তাঁরা নিজামুদ্দীন মারকাযে এসে উপস্থিত হলেন। নামাজের পর তার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের প্রতি অবজ্ঞা দেখালেন। তাঁরা যখন এ বিষয়ে কথা বাড়ালেন তখন তিনি বললেন-
یہ آپ کی بس کی بات نہی۔ یہ بہت اوپر کی بات ہے۔
তার সম্পর্কে আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করবো না। অন্যান্য আলোচকবৃন্দ এ সম্পর্কে আলোচনা করবেন। এ পর্যায়ে তার কিছু মালফূযাত আপনাদের সামনে পেশ করছি। তার নাম বলার পর আপনারা “দামাত বারাকাতুহুম” বলবেন না। বলবেন “খারিবাত খুরাফাতুহু”। কিছু দিন পরে তো আপনারাই বলবেন। কিন্তু প্রথম প্রথম বুঝে না আসতে পারে এজন্য স্মরণ করে দিচ্ছি।
সা’দ সাহেবের বিভ্রান্তিকর উক্তি সমূহঃ
১. বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা করার সময় তিনি বলে থাকেন, মুফাসসিরীনগণ এই আয়াতের এক তাফসীর করে থাকেন। আমি এই আয়াতের তাফসীর এভাবে করি, এটা শুনো, এটা সঠিক তাফসীর। মনোযোগ দিয়ে শুনো। মনোযোগ দিয়ে শুনো। (জমহুর মুফাসসিরীনদের বিপক্ষে গিয়ে নিজস্ব আঙ্গিকে কুরানের তাফসীর করতেন। যেটা সম্পূর্ণরূপে ভুল।)
২. ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম। কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামায পড়লে তার নামায শুদ্ধ হবে না।
৩. যেই উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তাঁরা উলামায়ে ছূ। বারবার কসম করে বলেন, তাঁরা হলেন উলামায়ে ছূ। এমন আলেমরা হল গাধা।
৪. মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা, প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো। উনার শব্দ হলঃ পেসাবদানী ছে পানি পিনা হাঁয়’।
৫. কুরআন শরীফ শিখিয়ে যাঁরা বেতন গ্রহণ করেন, তাঁদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
৬. মাদরাসাগুলোতে যাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। সারা আলমের মাদরাসাগুলো যাকাত নিয়ে হারাম কাজ করতেছে।
৭. রাসূল (স.)এর পর কেবল তিনজনের বাই’আত পূর্ণতা পেয়েছেন, বাকী সকলের বাই’আত অপূর্ণ। তিন জন হলেন; শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহ.), মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.) ও মাওলানা ইউসূফ (রাহ.)।
৮. তিনি আজমগড়ের ইজতিমায় একাধিকবার সুন্নাতকে তিন প্রকার বর্ণনা করেছেন- ইবাদাতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-আচরণের সুন্নাত। এটা তার নতুন উসুল।
৯. দাওয়াতের পথ নবীর পথ, তাছাউফের পথ নবীর পথ নয়।
১০. আযান হল-তাশকীল। নামায হল-তারগীব। আর নামাযের পরে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হল-তারতীব। তাশকীল অর্থ; প্লান, পরিকল্পনা। তারগীব অর্থ; উৎসাহ প্রদান। লক্ষণীয় যে, এই কথার মাধ্যমে তিনি নামাজকে এবাদতে মাকসূদা থেকে বের করে দিচ্ছেন। ঠিক যেন মওদুদী সাহেবের “তাফহীমাত এর উদ্ধৃতি। তারতীব অর্থ; কাজ বাস্তবায়ন।
১১. রাসূল (সা.) দাওয়াত ইলাল্লাহ’র কারণে ইশার নামায দেরীতে পড়ছেন। অর্থাৎ নামাযের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি।
১২. হযরত ইউসূফ (আ.) ‘উযকুরনী ইনদা রাব্বিক’ বলে গাইরুল্লাহ’র দিকে নযর দেয়ার কারণে অতিরিক্ত সাত বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।
১৩. হযরত মুসা (আ.) দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে কিতাব আনতে চলে গেছেন। দাওয়াত ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে পাঁচলক্ষ সাতত্তর হাজার লোক মুরতাদ হয়ে গেল।
১৪. হযরত যাকারিয়া (আ.) আল্লাহকে বাদ দিয়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন ফলে শাস্তি ভোগ করতে হল।
১৫. হযরত মূসা আ. থেকে এক বড় ভুল হয়েগেছে (এই ইবারতাটা হুবাহু মওদুদী সাহবের ইবারত)। এবং তিনি অপরাধ করে বসছেন। এই জন্য তিনি ক্বওমকে ছেড়ে আল্লাহর সান্বিধ্য লাভের জন্য নির্জনতা গ্রহণ করলেন।
১৬. আমাদের কাজের (তাবলিগী) সাথে লেগে থাকা এবং মাওলানা ইলিয়াছ ও মাওলানা ইউসূফ সাহেবের কিতাব পড়বে, অন্য কোন কিতাব পড়বে না।
১৭. হযরত মূসা (আ.) কর্তৃক একটি বড় ভুল হয়েছে যে, তিনি উম্মতকে ছেড়ে নির্জনতা অবলম্বন করেছেন।
১৮. হযরত মূসা (আ.) কর্তৃক হারুন আ. কে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানো উচিত হয়নি।
১৯. সকাল সকাল কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা এবং নফল নামায পড়ার একটা অর্থ বুঝে আসে কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ জিকির করে কী অর্জন হয়? কিছুই হয় না।
২০. এ-তাবলীগই নবুওতের কাজ। এছাড়া দীনের যত কাজ আছে-দীনি ইলম শিখানো, দীনি ইলম শিখা, আত্মশুদ্ধি, কিতাবাদি রচনা করা; কোনটাই নবুওয়াতী কাজ না।
২১. মাদরাসার শিক্ষকগণ মাদরাসায় খিদমাত করার কারণে দুনিয়াবী ধ্যান্দায় জড়িয়ে পড়েছেন এই জন্য তাদের দীনের মেহনতে সময় দেয়া দরকার।
২২. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জিজ্ঞাস করবেন, তা’লীমে বসেছিলে কি না, গাশত করেছিলে কি না?
২৩. প্রত্যেক সাহাবী অপর সাহাবীর বিরুদ্ধাচরণ করছেন। অথচ আল্লাহ তা’য়ালা বলছেন-
و ألف بين قلوبكم فأصبحتم بنعمته إخوانا.
২৪. হিদায়েতের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হাতে হতো, তাহলে নবী পাঠাতেন না। অথচ রাসুল (সা.) বলছেন- من يهدي الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له
২৫. আপনাদের কাছে সবচাইতে বড়গোনাহ চুরি-যেনা। এর চাইতে বড় গোনাহ হল, খুরুজ না হওয়া। তাই হযরত কা’ব ইবনে মালেকের সাথে পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত কথা-বার্তা বন্ধ রাখা হয়। (ইস্তেদলালের নমুনা দেখেন।)
তিনি শিক্ষা জীবিনে ছিলেন লাগামহীন। বড় বাবার সন্তান হওয়ায় আসাতিযায়ে কেরাম তাকে শাসন করতেন না। এই সুযোগে তিনি দু’ একটা ঘন্টা করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন, আর বন্ধু-সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা ও গল্পগুজবে সময় পার করতেন।
২৬. কুরআন শরীফ বুঝে-শুনে তেলাওয়াত করা ওয়াজিব। না বোঝে তেলাওয়াত করলে ওয়াজিব তরকের গোনাহ হবে।
এমন আরো অনেক ভ্রান্তি রয়েছে। যা তিনি জায়গায় জায়গায় লাখো মানুষের সামনে বর্ণনা করেছেন।
হযরতজী এনামুল হাসান (রাহ.)এর ইনতেকালের পর লাগামহীন হয়ে পড়েন। এসব বিভ্রান্তিজনক কথার পর সাত আট বছর যাবত নিজামুদ্দীন, কাকরাইল, দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা’র উলামায়ে কেরাম তার পিছনে মেহনত করেও তাকে সঠিক আক্বিদায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি। অবশেষে অক্ষম হয়ে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত “ফতওয়া” দিয়েছেন। পরিশেষে আমি জানতে চাই, যে মাওলানার কাছ থেকে অহরহ ভ্রান্তিমূলক কথা প্রকাশ পাচ্ছে। যিনি প্রকাশ্যে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এমন একজন ল্যাংড়া, লুলা মাওলানা যার কথাবার্তার ঠিক ঠিকানা নেই, এর পিছনে পাগলের মত ছুটছেন কেন? দাওয়াত ও তাবলীগে নিখুঁত কোন মানুষ নেই?? মুখের ব্যালেন্স ওয়ালা কোন বুজুর্গ নেই? যেখানে ইবরাহীম দেওলা সাহেব হাফিঃ ইয়াকুব সাহেব হাফিঃ আহমদ লাট সাহেব (হাফি.)এর মত উপমাতূল্য, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি উপস্থিত আছেন, সেখানে ল্যাংড়া, লুলা এই মরা গরু টেনে বেড়াচ্ছেন কেন?
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
সংকলনে- কালীম মাহফুজ