বিশেষ প্রতিনিধি: নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল ততই বাড়ছে। সকলেরই প্রশ্ন কে হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রার্থী। ইতিমধ্যে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মেয়র নির্বাচনে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। অপরদিকে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ইতিমধ্যেই আগামী নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আওয়ামীলীগ থেকে আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন পাবেন এমনটা নিশ্চিত হলেও গতকাল মঙ্গলবার সরকারী প্রজ্ঞাপন জারী করে মেয়র আইভীকে উপ-মন্ত্রীর পদ মর্যাদা দেয়ার পর আনোয়ার সমর্থকরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে আইভীর সমর্থকরা শুধু আনন্দ উল্লাসই নয় মিষ্টি বিতরণ পর্যন্ত করেছেন। খোদ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আইভীর আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। গত সোমবারও যাদেরকে আইভীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার তারাই বোস কেবিনের সামনে আতেলদের আড্ডায় আইভীর মনোনয়ন নিয়ে পক্ষেই মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে শহরের বাম পন্থিদের মধ্যে যেন নতুন করে উৎসাহ বেড়ে গেছে। সাংবাদিকদের একটি অংশকে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারির পর অতি উৎসাহী মন্তব্য করতে দেখা গেছে। গণমাধ্যমের অনেকেই গোপনে গতকাল রাতে মেয়র আইভীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও সাক্ষাৎকারী একজন গণমাধ্যমকর্মী নিশ্চিত করেছেন। এমনকি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও মেয়র আইভীকে মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে ফেইসবুকে আইভী সম্পর্কে তার বিরোধী পক্ষ আপত্তিকর কিছু মন্তব্য করলেও যুবলীগের ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মেয়র আইভীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে আইভীই মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা অনেকেই নিশ্চিত বলে মনে করছেন। তবে আনোয়ার হোসেনের সমর্থকরা এখনো হাল ছাড়ে নি। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও এখনো পর্যন্ত সাবেক এমপি আবুল কালাম অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে। আবুল কালাম নির্বাচন না করলে সেক্ষেত্রে বিএনপি হাইকমান্ড বিকল্প হিসাবে জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড: সাখাওয়াত হোসেনকে তাদের প্রার্থী হিসাবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। এড: আবুল কালাম নিজেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পাশাপাশি এড: সাখাওয়াত হোসেনও প্রার্থী হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া এটিএম কামাল ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী না দিলে সে নিজেই স্বতন্ত্র প্রাথী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিবে। তাছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমানের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত আইভী ছাড়া সকলের নামই গুঞ্জন হিসাবে শোনা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আইভী ও আনোয়ার হোসেনই আনুষ্ঠানিকভাবে নাসিকের মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ঘোষণা দেন নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে চলতি বছরের প্রথমদিক থেকেই মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম বেশ জোরে সোরে শোনা গেলেও এবার দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গতকাল মঙ্গলবার মেয়র আইভীকে উপ-মন্ত্রীর পদ মর্যাদা দেয়ার পর এ দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী চুনকা পরিবারের বিপক্ষে থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘নৌকা’র মাঝি হতে যাচ্ছেন বর্তমান মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা জানান, আওয়ামীলীগের অন্যতম রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের সাথে আইভীর দ্বন্দ থাকলেও গোয়েন্দা সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে জানা গেছে দলীয় প্রতীক নয় নারায়ণগঞ্জ বাসীর কাছে ব্যাক্তি আইভীর বেশ জনপ্রিয়তা আছে। আর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলেও আইভীকেই মেয়র হিসেবে পেতে আগ্রহী সাধারন জনতা। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করেই আইভীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের ইচ্ছে আছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আনোয়ার হোসেনের জনপ্রিয়তা আইভীর তুলনায় অনেক নীচে বলে জানিয়েছে। অপরদিকে ইতিমধ্যেই সিটি নির্বাচনে জেলা বিএনপির হেভীওয়েট নেতা গত সিটি নির্বাচনে বসে পড়া মেয়র প্রার্থী এড. তৈমূর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ এড. আবুল কালাম ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ মেয়র পদে নির্বাচন না করার অভিমত ব্যাক্ত করলেও ইচ্ছে পোষণ করা নগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামালের ভাগ্যেই নাকি জুটছে ‘ধানের শীষ’। তবে দলীয় হাইকমান্ড সুত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে তাদের তালিকায় এড: আবুল কালাম ও এড: সাখাওয়াত হোসেন খান ছাড়া অন্য কেউ নেই। আইভীর সাথে প্রতিদ্বন্দী হিসাবে কামালকে প্রার্থী দেয়া সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপি হাস্যকর হয়ে পড়বে বলে জানা গেছে। অপরদিকে সিটি নির্বাচনে এবার জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন ওসমান পরিবারের পুত্রবধূদ্বয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরীন ওসমান বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে। যদিও এব্যাপারে এখন মুখ খুলছেনা জাতীয় পার্টি। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দুই পুত্রবধুকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে। জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তার শূণ্য আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল তার সহধর্মিনী পারভীন ওসমানের। কিন্তু এপদে নির্বাচন করেন নাসিম ওসমানের মেঝ ভাই সেলিম ওসমান। তাই আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করে, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের জনপ্রিয়তাকে পুজি করে পারভীন ওসমান নির্বাচনে প্রার্থী হলে আইভীর সাথে পারভীন ওসমানেরই মূলত প্রতিদ্বন্দীতা হবে।