শহর প্রতিনিধি:নিখোঁজের ২১ দিন পর শহরের আমলাপাড়া এলাকার বন্ধুর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল (৯ জুলাই) রাত ১১টার দিকে আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালায় পুলিশ। তারা সেপটিক ট্যাংক খুলে ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে ৩টি বস্তায় প্রবীর ঘোষের ৫ টুকরো খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে। তবে খন্ডিত লাশ উদ্ধার হলেও উদ্ধার হয়নি দুই পায়ের হাটুর নিন্মাংশ।
এ বাড়ির ২য় তলায় প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ভাড়া থাকতেন। পুলিশ এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, গত ১৮ জুন রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর বালুর মাঠের বাসা থেকে কালিরবাজার এসে নিখোঁজ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। নিখোঁজের ঘটনায় ১৯ জুন প্রবীরে বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর প্রবীর ঘোষকে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ।
প্রবীর ঘোষের সন্ধানকালে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় ব্যবহার হওয়ার সন্ধান পায় পুলিশ। তারা মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে এর বাহক বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করে । বাপন ভৌমিক পুলিশকে জানায় পিন্টু তাকে এ মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। পুলিশ বাপনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে। এরপরপরই গ্রেফতার করা হয় প্রবীরের বন্ধু পিন্টু দেবনাথকে।
জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিক জানায়, প্রবীর ঘোষের লাশ আমলাপাড়ার ১৫ কে সি নাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে রয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পরপরই পুলিশ বাড়িটিকে ঘিরে রাখে। এবং ডোম নিয়ে এসে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তল্লাশী অভিযান চালায়। ৩টি বস্তায় খন্ডিত লাশ পাওয়া যায়। অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় লাশটির খন্ডগুলোর বিকৃত হয়ে গেছে।
জানা গেছে, কিছু দিন আগে ভারতের কলকাতায় প্রবীর ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথের ওপেন হার্ট সার্জারী হয়। এই প্রবীর ঘোষই ভারতে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য সকল সহযোগিতা করে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, কেন এবং কি কারণে এ হত্যাকান্ড এ ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি মুখ খোলে নি পিন্টু দেবনাথ এবং বাপন ভ্রৌমিক।
পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে, প্রবীর ঘোষের এক ভাই দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছে। ঐ ভাইয়ের দেয়া টাকা নিয়েই প্রবীর ও পিন্টু স্বর্ণ ও সুদের ব্যবসা করছিলেন। এই টাকার একটি বিশাল অংশ পিন্টুর কাছে গচ্ছিত ছিলো। প্রবীর এ টাকার জন্য কিছুদিন ধরে পিন্টুকে চাপ দিয়ে আসছিলো।
পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই প্রবীর ঘোষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ এখনো সুস্পষ্ট নয়। গ্রেফতারকৃত পিন্টু দেবনাথ এবং বাপন ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুধুমাত্র লাশটি কোথায় আছে তা বলেছে।
কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, কারা কারা জড়িত, কেনোই বা হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে তারা পুরোপুরি মুখ খোলেনি। যেহুতু লাশ উদ্ধার হয়েছে পুরো ঘটনাটি এখন পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদিকে প্রবীর ঘোষের মৃত্যুর খবরে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারন ঘটে আমলাপাড়ার ১৫ কেসি নাগ রোড এলাকায়। লাশ উদ্ধারের খবরে একে একে আসতে থাকেন প্রবীর ঘোষের পরিবারের লোকজন, আত্মীয় স্বজন ও ব্যবসায়ী বন্ধুরা। বিলাপের সঙ্গে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার এক আত্মীয়া। তবে লাশ উদ্ধারের স্থানে তার স্ত্রী, সন্তান এবং বাব মা কাউকে দেখা যায়নি।
প্রিয় ভাই হারিয়ে শোকে মূহ্যমান ইটালি প্রবাসী ছোট ভাই সৌমিক ঘোষ যুগের চিন্তা ২৪ কে বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। ওরা মানুষ না। মানুষের আড়ালে নরপিচাশ। হত্যাকারীদের যেন বাংলাদেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয় এটাই এখন আমাদের চাওয়া।
এই ঘটনার পেছনে অন্যকারো হাত আছে দাবি করে কালীবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মার্কেটের সভাপতি সঙ্কর ঘোষ বলেন, ওরা দুজন মিলে হত্যা করেনি। এই হত্যার পেছনে অন্য কারো হাত আছে। আমরা চাই, হত্যার রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকারী এবং হত্যার পরিকল্পনাকারী সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক।
নিখোঁজের পর থেকে উদ্ধারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে পিন্টু ও বাপন ভৌমিক সক্রীয় ছিলো জানিয়ে প্রবীর ঘোষের মামা বলেন, ওদের বারবার বলেছি ‘তোরা কিছু জানলে আমাগো বইলা দে, ওরা বলে নাই। ওরা আন্দোলন করছে। সবার লগে লগেই ঘুরছে। কেডায় জানে এমন বন্ধু নরপিচাশ হইয়া ধরা দিবো!
প্রবীর ঘোষের নিখোঁজের পর থেকেই তাকে উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুকুল মজুমদার বলেন, আমরা চাই প্রবীর ঘোষের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।