ডেস্ক নিউজ: সেনা অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হল তুরস্ক। এখনও পর্যন্ত পাওয়া সংবাদে সেনা অভ্যুত্থান সফল হয়নি। যদিও তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে তা এখনও পরিষ্কার নয়। ছুটি কাটানো বাতিল করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইস্তানবুল চলে গিয়েছেন। সেখান থেকে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার ডাক দিয়েছেন। যদিও তুরস্কের সেনাপ্রধানের কোনও সন্ধান বা বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। এই অভ্যুত্থানের চেষ্টায় এখনও পর্যন্ত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত ১৭ জন সেনা অফিসারও আছেন। তাঁরা একটি হেলিকপ্টার দখল করে যাওয়ার সময়ে এফ-১৬ ফাইটার জেট হেলিকপ্টারটিকে গুলি করে নামায়। ১৭ জন অফিসারের মৃত্যু হয়। শেষ খবর বলছে বিদ্রোহী সেনাদের একাংশে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। এই ঘটনায় ৩৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক প্রশাসন। আটক করা হয়েছে ৭৫৪ জনকে।

শুক্রবার গভীর রাতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তানবুল-সহ বেশ কিছু শহরের দখল নিতে শুরু করে সেনা। তুরস্কের সংসদের বাইরে সেনার ট্যাঙ্ক চলে আসে। শুরু হয় গোলাগুলি। এরদোগানের সমর্থনে জনতার এক অংশ পথে নামে। সেনার একাংশ প্রতিবাদী জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তুরস্কের জাতীয় টেলিভিশন, ইস্তানবুল এবং আঙ্কারার বিমানবন্দর দখল করে। সেনার পক্ষ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করে জন্য সামরিক অভ্যুত্থান করা হয়েছে বলে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে জানা যায়, সামরিক বাহিনীর একটি অংশ এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত। সূত্রের খবর, সেনারা নিচু তলার অফিসারের এই অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছিলেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এটাকে অভ্যুত্থান বলে মানতে নারাজ। তাঁর মতে এটা সেনা বিদ্রোহ। এর পরেই ইস্তানবুলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান জানান, বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারের বিদ্রোহের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। সেনার কর্তৃপক্ষের কোন অংশ এর সঙ্গে জড়িত তাও স্পষ্ট নয়। তবে এরদোগানের নীতি তুরস্কের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। এরদোগানের ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ তুরস্কে সর্বেসর্বা। ইসলামের ভিত্তিতে এই দলটি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তাঁর ক্ষমতা যত তীব্র হয়েছে ততই তুরস্কে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এরদোগানের হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক ইসলামের দিকে ঝুঁকছে বলে অভিযোগও উঠেছিল। তা ছাড়া প্রথম থেকেই তিনি সেনাকে তুরস্কের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই সেনারা তাঁর বিরুদ্ধে মাথা তুলতে পারেনি।

সিরিয়ায় লড়াই শুরু হলে পরোক্ষে ইসলামিক স্টেট (আইএস) কে মদত দেয় তুরস্ক। আইএস-এ নাম লেখাতে জেহাদিদের ঢল নামে। তাঁদের বড় অং‌শ তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পৌঁছয়। কিন্তু অচিরেই আইএস-এর সমর্থন থেকে সরে আসতে হয় সিরিয়াকে। এখন আইএস বিরোধী জোটের অংশ তুরস্ক। আইএসের উপরে আক্রমণ শানাতে সিরিয়ার বিমানঘাঁটি ব্যবহার করছে আমেরিকা। কিন্তু এর মধ্যেই কুর্দদের সঙ্গে পুরনো লড়াই শুরু করেছেন এরদোগান। কুর্দদের ঘাঁটিতে বিমান হানা চালানো হয়। প্রতিক্রিয়ায় ইস্তানবুল শহরে বেশ কিছু জায়গায় বোমার হামলা চালায় কুর্দরা।

অন্য দিকে, রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয়েছে তুরস্কের। সিরিয়ায় লড়াইয়ের শুরুতে বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এরদোগান। কিন্তু ইস্তানবুল বিমানবন্দরে হানার পরে আল-আসাদের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলার কথা জানিয়েছিল তুরস্ক। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অস্থিরতার  যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতেই ‌সেনার একাংশকে বিদ্রোহী করে তুলেছে।


তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ বসফোরাস সেতু আটকে দিয়েছে সেনারা।ছবি: রয়টার্স।

তুরস্কের এই অবস্থায় আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্বের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। বিশাল সেনাবাহিনী। তুরস্কের সেনার সামরিক হার্ডওয়্যারের বড় অংশ আমেরিকা থেকে আসে। বিপুল সেই সামরিক খরচ। পাশাপাশি মার্কিন সেনা কোনও সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা সেনার সঙ্গে সহযোগিতা করে না। এ ক্ষেত্রে কী হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। আইএস বিরোধী লড়াই-এ তুরস্ক অন্যতম সঙ্গী। তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তুরস্কে গোপনে আইএসের অসংখ্য সেল সক্রিয় রয়েছে। এই অবস্থায় তুরস্কের অস্থিরতা আইএস-কে আরও উজ্জ্বীবিত করবে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।