১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 249

না’গঞ্জে অভিনব কৌশলে প্রবেশ করছে

 
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাদক মজুদ করতে শুরু করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মাদকের চালান প্রবশে করছে নারায়ণগঞ্জে। কিছু কিছু মাদকের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও বেশীর ভাগ চালানই নিরাপদে চলে যাচ্ছে নিদিষ্ট স্থানে। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে। মাদব ব্যবসা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলেও মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কৌশলেই মাদকের চালান নিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসার সাথে রাজনীতিক, সাংবাদিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতাও রয়েছে। ফলে তাদের সহায়তাই জেলার বিভিন্ন স্থানে নিদিষ্ট সময়ে মাদক চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতা,ক্যাডার ও কিছু কথিত সাংবাদিকরা জড়িয়ে যাওয়ায় অনেকে প্রতিবাদ জানাতে সাহস পাচ্ছে না। অনেক সময় প্রাবাদকারীরা নানা ভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মাদক ব্যবসা নিমূর্লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গণসচেতনতা বৃদ্ধির দাগিত দিয়েছেন অপরাধ বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, মাদক ব্যবসায়ী প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর হলেই চলবে না, এ ক্ষেত্রে সমাজের দায়িত্বশীল সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্রমতে, নারায়ণণগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় রয়েছে। ঈদকে ঘিরে মাদকের বড় চালান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে মাদকের বড় চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অধিক সতর্কতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাদকের ছোট বড় চালান আটক হলেও তা অনেক মাদক প্রবেশের তুলনা অনেক কম। সূত্রের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সহায়তা করছে। এর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য, কথিত সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা ও ক্যাডার জড়িত রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মাদক ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। পর্দার আড়াল থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অনেক নেতা। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ভদ্র মুখোর কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরেছে বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে। যে কারণে অনেক সময় মাদক বিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অসহায় হয়ে পরে।
বিভিন্ন সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের ক্ষেত্রে নদী, সড়ক ও রেলপথের সুবিধা থাকায় রুট পরিবর্তন করে সহজেই নারায়নগঞ্জে মাদক দ্রব্য প্রবেশ করছে। রাতের আধারে কিংবা নিরব সময়েই নারায়ণগঞ্জের নিদিষ্ট স্থানগুলোতে মাদক চলে যাচ্ছে। কিছু সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও কিছু করার থাকে না। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কৌশলে মাদকের চালান চলে যাচ্ছে। নিদিষ্ট স্থানে মাদক পৌছে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী,শিশু, কিশোর এবং সুন্দর তরুনীদের। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায় মাদক প্রবেশ করছে। সূত্র জনায়, জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগা, আড়াইহাজার,বন্দর,সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লার পাশপাশি শহরে অভিনব কৌশলে চলছে মাদক ব্যবসা। শহরের গলাচিপা, শীতলক্ষ্যার মোড়, নিতাইগঞ্জ ও সৈয়দপুরে একাধিক সিন্ডিকেট মাদক ব্যবসা চালিয়োচ্ছে। এছাড়া মাসদাইর এলাকা যেন মাদকের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। শহরের শীতলক্ষ্যা মোড়,নিতাইগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় এক কাউন্সিলরের সহযোগীতায় মাদক ব্যবসা হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানাগেছে। এই এলাকায বিটু নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সাথে ওই কাউন্সিলরের মাদক ব্যবসার বিরোধ এখন অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অন্যদিকে, ফতুল্লা পাইলট স্কুল, খোঁজপাড়া, ষ্টেশন, তক্কার মাঠ এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক বেচাকেনা। বক্তাবলী এলাকা মাদক ব্যবসার জন্য নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ওই এলাকার একাধিক সূত্রে জানাগেছে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, ঈদকে ঘিরে যে ভাবে মাদক মজুদ হচ্ছে তা রূখতে এখনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষকে একযোগ কাজ করতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একক প্রচেষ্টা মাদক প্রবেশ ও ব্যবসা প্রতিরো করা সম্ভব না।

Auto Draftইতালির ৯ নাগরিকের মরদেহ নিয়ে বিশেষ বিমানের ঢাকা ত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ইতালির ৯ নাগরিকের মরদেহ নিয়ে একটি বিশেষ বিমান ঢাকা ত্যাগ করেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিমানটি ঢাকা ত্যাগ করে।
এর আগে লাশ দেশে নিয়ে যেতে ঢাকায় আসেন ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাপো পিস্তেলি। মঙ্গলবার সকালে একটি বিশেষ বিমানে তিনি ঢাকায় আসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান।
জানা গেছে, ঢাকা বিমানবন্দর থেকেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল হলি আর্টিজান পরিদর্শন করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান হোটেলে জঙ্গিদের হামলায় ৯ ইতালীয়সহ ২২ জন নিহত হন। পরে যৌথবাহিনীর উদ্ধার অভিযানে ৬ জঙ্গিও নিহত হন। সোমবার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে এ হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সর্বস্তরের মানুষ। এরপর সিএমএইচ থেকে নিহত ইতালীয় নাগরিকদের মরদেহ বুঝে নেন ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা।
এদিকে, বন্দুকধারীদের হামলায় ইতালির ৯ নাগরিক নিহতের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে ইতালি। এর অংশ হিসেবে রাজধানী রোমসহ ইতালির সব প্রধান শহরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। নিহতদের স্মরণে রোমের ক্যাম্পিডোগলিও প্রাসাদকে ইতালির পতাকার রঙে রাঙানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় কয়েকজন সশস্ত্র জঙ্গি। ঘটনার পর অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম নিহত হন। জঙ্গিরা রাতেই তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। শনিবার সকালে যৌথবাহিনী ওই রেস্টুরেন্টে কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ছয় জঙ্গি নিহত হয়। গ্রেফতার করা হয় একজনকে। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে। নিহত বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ছিলেন।

নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য ব্রিফিংয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সমস্যা অভিন্ন। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ।

ব্রিফিংয়ের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদকে একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্যান্য দেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন।

গুলশানের ওই জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন দেশ ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে ও বিবৃতি দিয়ে সমবেদনা জানানোয় বাংলাদেশকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

আলীরটেক যুবলীগ নেতা এস ভি শাহীন সরকারের উদ্যোগে অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে মাংস বিতরন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,সমাজ সেবক ও আলীরটেক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ এস ভি শাহীন সরকারের উদ্যোগে গরীব, অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে মাংস বিতরন করা হয়। বুধবার বিকার সাড়ে ৩টায় আলীরটেক তার নিজ বাস ভবন সরকার বাড়ীতে ৩শ গরীব, অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে মাংস বিতরন করেন তিনি। এই সময় উপস্থিত ছিলেন,হাবিবুল্লাহ সরকার,শামীম সরকার,মফিজুল সরকার,আবজাল মিয়া ও আবু জাফর সুলতার প্রমুখ।

ফতুল্লা পোষ্ট অফিস সড়কটি দেখার কী কেউ নেই?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফতুল্লায় শত কোটির টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চালু থাকলেও পোষ্ট অফিস সড়কের সংস্কার প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ যেন আর শেষ হচ্ছে না। কয়েকবার উক্ত সড়কের ব্যাপারে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান অঙ্গীকার করলেও রহস্যজনক কারনে বছর পেরোলেও সড়কটির মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে না কোন সংস্থা। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা যায়,ফতুল্লা পোষ্ট অফিস রোডটি দীর্ঘদিন যাবত চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। বর্ষা এলে এই দুর্ভোগ আরো ভয়াবহ আকার ধারন করায় এ সড়কে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে স্থানীয়দেও দূভোর্গ আরো বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে সাংসদ শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে স্থানীয় ভূক্তভোগী মহল।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দেয়া হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ আশপাশ এলাকায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চললেও উক্ত সড়কের সংস্কার কাজের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোন সংস্থাই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উক্ত সড়কের মেরামতের ব্যাপারে ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের প্রকৌশলী ও এলজিইডি দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কারো কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এই সড়কের বর্তমান চিত্র অনেক ভয়াবহ। প্রায় প্রতিদিন এই সড়কে দূঘর্টনা ঘটছে। পায়ে হেটে এই সড়ক দিয়ে চলাচল যে কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। এই সড়কের দুই পাশে ছোট বড় কয়েকশ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কয়েক হাজার বসত বাড়ি রয়েছে। যে কারনে এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে এই সড়কের সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয়দের দূভোর্গ চরম পর্যায়ে চলে গেছে। এই দূভোর্গ নিরসনে সাংসদ শামীম ওসমানের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে স্থানীয়রা।

ক্ষমতাশীনদের মদদে জঙ্গীবাদ,চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসবাজদের উত্থান : তৈমুর আলম

জেলা বিএনপির সভাপতি এড্যাঃ তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, দেশে আজ চরম সংকটে, এ সংকট মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া অন্যকোন বিকল্প নাই।

দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্ষমতাকে  উপেক্ষা করে  এবং প্রতিটা বিষয়ে বিএনপিকে দোষারূপ করে একতরফা ভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রন করায়, আজ এক দিকে জঙ্গীবাদ উত্থান হয়েছে।

অন্যদিকে পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে ক্ষমতাশীনদের মদদে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসবাজ। তিনি রোবারার বিকাল ৫ টায় নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা সাফুদিন মাহমুদ ফয়সাল এর উদ্যোগে বার্মাষ্ট্যান্ড এলাকায় গরীব, অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরন কালে  প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন। নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা সাফুদিন মাহমুদ ফয়সালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, সদস্য আকতারুজ্জামান লিটন,থানা যুবদলের সাধানর সম্পাদক জুয়েল প্রধান, মহানগর জাসাসের যুগ্ন আহবায়ক মনজুর আহমেদ অনিক,থানা যুবদলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ আব্দুল রহিম,যুবদল নেতা সজিব ভূঁইয়া, রাকিব ভূঁইয়া, সজিব কাজী, রাজু, বিল্লাল, সবুজ, ছাত্রদল নেতা এরশাদ, হিরু, আবদুল, সুরুজামান, প্রিয়াস প্রমূখ।

এ সময় তৈমুর আলম খন্দকার আরো বলেন, এ সরকারের জুলুম অত্যাচারের বিএনপি সে সব নেতা কর্মীরা পঙ্গুত্ব বরন করেছেন বিএনপির আগামী দিনের কান্ডারী তারেক রহমান সে সব প্ররিবারের নিকট ঈদ গিফট পাঠিয়েছেন। ভ্যাগ্যহত মানুষের মনে  ঈদের খুশ ভাগাভাগি করার উদ্দ্যেশ্য তারেক রহমান নিদেশ দিয়েছেন। তারি ধারাবাহিকতায় যুবদল নেতারা সিদ্ধিরগঞ্জের ভিবিন্ন এলাকায় নিজ উদ্যোগ ঈদ সামগ্রী বিতরন করায় আমি তাদের প্রতি কৃতক্ষতা প্রকাশ করছি।
তিনি আরো বলেন, দেশের সে ভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে তাতে কারো নিরাপত্তা নাই। অথচ সরকার জঙ্গী দমনের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। দেশটাকে একটা অকাজ কর রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে সরকার। নিজ দলেরর নেতাকর্মীরা বা তাদের ছেলের আজ আইএস এর মত জঙ্গীদের সাথে মিশে মানুষ হত্যা করছে। তাদের গ্রেফতার না করে খালেদা জিয়ার নেতামর্কীদের আটক করে নির্যাতন চালাচ্ছে এ সরকারের পেটুয়া বাহিনী। এ দমন পিরিয়ন না করে, দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ডাকে দলমত নিরবিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গী দমন করুন। দেশেকে বাচাঁতে হবে ও গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে একটি অবাধ সুষ্ট নির্বাচান দরকার দিন। নির্বাচন হলে গনতন্ত্র চর্চা হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা মথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবেনা।

পুলিশের অস্ত্র লুটকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী খান মাসুদ ৩ দিনের রিমান্ডে

বন্দরে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনতাই ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় ২টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্ত্রাসী খান মাসুদকে প্রধান আসামী করে মামলা ২টি রুজু করা হয়। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার মামলা পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আসামীদের আদালতে পাঠালে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গত শনিবার সকালে ছাত্রলীগ নেতা সন্ত্রাসী খান মাসুদের নেতৃত্বে তার বাহিনী পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পুলিশের অস্ত্র লুট করে। এ ঘটনার পর পুলিশ শাড়াশি অভিযান চালিয়ে তার কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১৭টি ধারালো অস্ত্রসহ পুলিশের কাছ থেকে লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ অখিল সরকার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামীকে মামলা রুজু করে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বন্দর থানার দারোগা এহসান চৌধুরী বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অস্ত্র মামলা রুজু করে। এ ছড়াও শুক্রবার সকালে বন্দর ডক ইয়ার্ডের মালিক আবুল কালাম বাসুকে পিটিয়ে আহতসহ মাসুম নামে এক শিশু গুলি বিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ডক মালিক আরও একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী খান মাসুদ, তার সহযোগি মোশারফ, এলিন, সাচ্চু, শামীম, রাকিবকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
এ ব্যপারে এলাকাবাসী বলেন, সন্ত্রাসী খান মাসুদ বেপোরোয়া হয়ে ভাবে বন্দর খেয়াঘাট জিম্মি করে অটো চালকেদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে বেড়াত। তরে একটি বাহিনী ছিল যারা খেয়াঘাট এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে যেত। সামাস্য কিছু হলেই তারা অটো সিএনজি বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের দুভোর্গে ফেলে দিল। তার অপকর্মে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। তাকে ভাভ ভাবে জিজ্ঞাসাব করলে তার কাছ থেকে আরও অস্ত্র উদ্ধার হবে বলে এলাকাবাসী ধারণা করছেন।

গুলশান ট্র্যাজেডি নিয়েও কি দুই দল ব্লেম গেম খেলবে?

কাজী সিরাজ : সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত গুপ্তহত্যার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত বলে আবারও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৯ জুন বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজের অধ্যাপক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার প্রয়াস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধৃত ফাহিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ফাহিমের জন্য খালেদার মায়াকান্না কেন? দীর্ঘদিন ধরে সরকারপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে আসছে। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগটি নতুন নয়। অতি সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও জঙ্গি তৎপরতায় সরকারি দল জড়িত বলে অভিযোগ করে চলেছেন ধারাবাহিকভাবে। পারস্পরিক এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগকে আমাদের দেশের অসুস্থ রাজনীতির স্বাভাবিক প্রকাশ বলেই ধরে নেওয়া যায়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দুই নেত্রী এবং দুই দলের এই ব্লেম গেম প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিতকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিই সৃষ্টি করে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জঙ্গি তৎপরতা থামছে না জঙ্গি গ্রেফতারে ও জঙ্গি দমনে তেমন কোনো সাফল্যও দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে যে, জঙ্গি দমনে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। দল, মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যের ওপর জোর দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে একমত না হলে কাক্সিক্ষত সার্বজনীন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা যে সম্ভব নয়, তা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদেরই উদ্যোগটা নিতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, বেশ কিছু দিন ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জঙ্গি সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য-উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। পার্টি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও জঙ্গি সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ যে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলছেন, তা দলের মহাসচিবের বক্তব্যকে আরও অর্থপূর্ণই করে তোলে। বলা যায়, জঙ্গি সমস্যা সমাধান করার ব্যাপারে সরকারের যে কোনো কার্যকর ও সৎ উদ্যোগের সঙ্গে বিএনপি যুক্ত হতে সম্মত আছে। জঙ্গি সমস্যাটি এককভাবে ক্ষমতাসীন সরকার বা কোনো দলবিশেষের সংকট নয়; এটি সব দলের সংকট, সমগ্র জনগণের সংকট— জাতীয় সংকট। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে বিএনপিকে আস্থায় নেওয়া এবং তাদের এ সংক্রান্ত সংলাপ ও সর্বদলীয় উদ্যোগের আহ্বানকে মূল্য দিয়ে ত্বরিত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অব্যাহত দোষারোপের রাজনীতি ও বিভেদের ভেদরেখা গভীর এই জাতীয় সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, জাতির সামনে দিন দিন বিপদ আরও বাড়বে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রতিপক্ষকে রাজনীতিকভাবে ঘায়েল করার একটা ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলে ধরে নিলেও ‘ফাহিমের জন্য খালেদার মায়াকান্না কেন’ বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ফাহিম অপরাধী তাতে কোনো সন্দেহ নেই, হতে পারে তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও আছে। বেগম জিয়ার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকলে তো ফাহিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় তার তো খুশি হওয়ার কথা এই কারণে যে, অধ্যাপক রিপন চক্রবর্তী হত্যা প্রচেষ্টার নেপথ্য নায়কদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো তথ্য পাবে না। বরং উল্টো এই ব্যাখ্যা হতে পারে যে, ঘটনার প্রকৃত নায়কদের তথ্য গোপন রাখার জন্যই ফাহিমকে মেরে ফেলা হয়েছে। নেপথ্য নায়করা যদি বেগম জিয়ার কথিত পৃষ্ঠপোষকতাধন্য ‘জঙ্গি চক্রের’ লোক হয়, তাদের চিহ্নিত করে দিলেই তো সরকার পক্ষের অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করল কেন? প্রশ্নটি আসে যে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই কি চায়নি যে এ হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত মূল নায়কদের চেহারা উন্মোচিত হোক। অর্থাৎ নেপথ্য নায়করা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, সে জন্য ফাহিম ‘হত্যাকাণ্ড’ বা ‘বন্ধুকযুদ্ধের’ অবতারণা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে না গিয়ে বেগম জিয়ার পক্ষেই চলে গেছে। ফাহিম অপরাধী হলেও তার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমাদের দেশের প্রচলিত আইনও সমর্থন করে না। বিচারবহির্ভূত যে কোনো হত্যাকাণ্ডই আইনের চোখে অচল। সরকারি-বেসরকারি কোনো মহল থেকে এমন কোনো বক্তব্য আসা উচিত নয়, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যৌক্তিকতা প্রমাণে চেষ্টা বলে মনে হতে পারে। তাতে আইনের হাতকে খুব ‘খাটো’ মনে হতে পারে এবং এসবের যারা চর্চা করে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব বলে ভাবেন, তারা আরও আশকারা পেয়ে বসেন। আশা করি ফাহিম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে আরেকটু খতিয়ে দেখবেন এই কারণে যে, বেগম খালেদা জিয়া বা তার দল অথবা অন্য কেউ এ কথা যাতে বলতে না পারে যে, একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত অধ্যাপককে হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে সরকারি দলের কোনো লোকই জড়িত এবং তাকে প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য ফাহিমকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বলি করা হয়েছে।

একদা ক্রসফায়ার এখন ‘বন্দুকযুদ্ধ’। এ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এ ব্যাপারে যেসব তথ্য প্রচার করা হয় তা মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না। একজন আসামি যত দুর্র্ধষই হোক, বন্দী দশায় র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ তার থাকে না বললেই চলে। বন্দীকে নিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধার’ বা অন্য কোনো অভিযানে যওয়ার প্রাক্কালে বন্দী ব্যক্তির তো তার অনুসারীদের কাছে বার্তা দেওয়া সম্ভব নয় যে, ‘আমাকে নিয়ে অমুক জায়গায় অভিযানে আসছে, তোমরা প্রস্তুত থেকো।’ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধৃত আসামি ছাড়া আর কাউকে তো মারা যেতে খুব একটা শোনা যায় না। ‘যুদ্ধ’টা কার সঙ্গে হয়? এ প্রশ্নগুলো আছে, থাকবে। জঙ্গি হোক, খুনি ধর্ষক বা যত বড় অপরাধীই হোক আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত— শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমাদের দেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কিন্তু তা থামছে না। রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০০৪ সাল থেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলা হচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুধু এই সরকারের আমলেই হচ্ছে তা নয়। উল্লেখযোগ্য হারে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকে ২০০৪ সাল থেকে। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠিত হয় সে বছরই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তখনো খুব খারাপ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেই এলিট ফোর্সটি গঠন করা হয় এবং তারা প্রথম অপারেশনে নামে ‘ক্লিটহার্ট’ নামে। তাতে অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিজ দলের অনেক লোককেও ‘বলি’ দেওয়া হয় সুনাম কুড়োনোর উদ্দেশ্যে— এমন অভিযোগ এখনো করে থাকেন নিহতের স্বজনরা। তখন নাম ছিল ক্রসফায়ার, এখন যাকে বলা হচ্ছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের এক তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এমন হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ ১৬৩৫। তাদের তথ্যানুযায়ী ২০০৪ সালে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ১৬৬। ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪০ জনে। এরপর ২০০৬ সালে ২৯০ জন, ২০০৭ সালে ১৩০ জন, ২০০৮ সালে ১৩৬ জন, ২০০৯ সালে ১২৯ জন, ২০১০ সালে ১০১ জন, ২০১১ সালে ৬৫ জন, ২০১২ সালে ৫৩ জন, ২০১৪ সালে ১১৯ জন এবং ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৫৯ জন। এই বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমান সরকারের আমল থেকে বিএনপি-জামায়াত জামানায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ২০০৪ সালের ২৬ জুন শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানকে দিয়ে ‘ক্রসফায়ারের’ যাত্রা শুরু হয় বলে রেকর্ড সাক্ষ্য দেয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। তারা ‘ক্রয়ফায়ারের’ প্রচণ্ড বিরোধী ছিল তখন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’ বিএনপির ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য অঙ্গ দলের অনেকে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হলেও জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে সেই ‘আজাবের’ মধ্যে তেমন পড়তে হয়নি। এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তখন থেকেই বিএনপির গর্বের সংগঠন ছাত্রদল হীনবল হতে শুরু করে এবং ছাত্রদল-যুবদলের নেতা-কর্মীরা দলের জন্য কোনো রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে উদ্যম হারিয়ে ফেলে। বিএনপি এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এটা ভালো কথা। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের অতীতও তো ভালো নয়। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অবস্থান নিয়ে মানুষের মধ্যে সমালোচনা আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে যেসব কথাবার্তা বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং বাহিনীর দায়িত্বশীলদের কথাবার্তার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা বলেন, আক্রান্ত হলেই নাকি বাহিনীর লোকেরা গুলি ছোড়ে। কখনই এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। ক্রসফায়ার বলুন আর ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলুন, গণতন্ত্রে ও আইনের শাসনে কোনোভাবেই তা সমর্থনযোগ্য নয়। রাষ্ট্রশক্তির চেয়ে কোনো জঙ্গিশক্তি বা দুর্বৃত্তশক্তি অধিকতর শক্তিশালী নয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এখনো অনেক প্রশিক্ষিত, দক্ষ এবং ওয়েল ইকুইপড’। তাদের অনেক সাফল্যগাথাও আছে। তারা স্বাধীনভাবে তাদের প্রফেশনাল স্কিল ব্যবহার করতে পারলে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ছাড়াই তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে স্বাধীনতা কতটুকু ভোগ করতে পারে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতাসীনরা (যে যখন ক্ষমতায় থাকছেন) দলীয় বাহিনীর মতো বিবেচনা করে কাজে লাগান বলে অভিযোগটা বেশ জোরালো। ফলে দলবাজ, সরকারগুলোর দলবাজির অভিশাপ তাদেরও স্পর্শ করে। তখন ‘পুলিশ শাসন’ আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অতীতে যা হয়েছে, এখনো যা হচ্ছে তাতে জনশান্তি ও জনস্বার্থ নিশ্চিত হচ্ছে না।

টার্গেট কিলিং এবং জঙ্গি তৎপরতা সব মানুষের মনেই ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সরকারি দলের লোকজনও শান্তিতে নেই, স্বস্তিতে নেই। তাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। ভয়, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে একটি জাতি সমৃদ্ধির সড়কে গতিময় যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে না। দেশটা আওয়ামী লীগেরও নয় বিএনপিরও নয়। এ দেশ ১৬ কোটি মানুষের। রাজনীতিবিদদের সব কাজই হওয়ার কথা জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে। জঙ্গি তৎপরতার মুখে রাষ্ট্র এখন সংকটে। রাষ্ট্র জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিজের সক্ষমতা স্পষ্ট করতে পারছে না। সমগ্র জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্রের পক্ষে না দাঁড়ালে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণ করবেই বা কোত্থেকে?

জনগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। এই ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্বটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, ব্যক্তি ও শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ। কেউ কেউ বলেন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, সুশীল সমাজ উদ্যোগ নিলে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। আমাদের জনসমাজ লীগ-বিএনপি দুভাগে এমন বিভক্ত হয়ে গেছে যে, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্য ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সমগ্র জনগণের ঐক্য বিলাসী কল্পনা হতে পারে, বাস্তব হবে না। বিএনপি এ ব্যাপারে ‘বল’ আওয়ামী লীগের কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন রেসপনসিভ না হলে দায় যাবে আওয়ামী লীগের কাঁধে। জঙ্গি ইস্যুতে বিএনপি তো ঐক্য ও সমঝোতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ কি হাত বাড়াবে না?

এ লেখা যখন শেষ করেছি, ঠিক তখন টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে ১ জুলাই রাতে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ‘হলি অর্টিজান বেকারি’ নামক রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ভয়াবহ চিত্র। সন্ত্রাসীরা রেস্তোরাঁর ভিতরে থাকা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। উদ্ধার অভিযানে পুলিশের দুজন সাহসী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন নিহত হয়েছেন অপারেশন শুরুর প্রথম দিকেই। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী জিম্মি উদ্ধার অভিযান শুরু করে ২ জুলাই সকাল ৭.৪০ ঘটিকায়। সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযান শেষ হওয়ার আভাস পাওয়া যায়। তখন পর্যন্ত পুলিশের দুই কর্মকর্তা ছাড়া ২০ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে মিডিয়া। সবার পরিচয় কিন্তু দিতে পারেনি। এ লেখা পাঠকরা যখন পড়বেন তখন সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে কী ঘটেছে সে রেস্তোরাঁয়। আইএসপিআর বলেছে জিম্মি ঘটনায় ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, হামলাকারীরা রাষ্ট্রশক্তিকেই আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। মাত্র ক’দিন আগে সমাপ্ত সপ্তাহব্যাপী জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে ১৩ হাজার লোককে গ্রেফতার করেও যে কাজের কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি তা বোঝা গেল। আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সমন্বিত-সম্মিলিত রাজনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী একটি জাতীয় জাগরণ ছাড়া পরিস্থিতির মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা চেষ্টা তো করছে, প্রাণও দিচ্ছে। রাজনীতিবিদরা বক্তৃতাবাজি ছাড়া একে অপরের ওপর দোষ চাপানো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আশাজাগানিয়া কী এমন করছেন তা দৃশ্যমান নয়। আশা করি, গুলশান ট্র্যাজেডির পর প্রধান রাজনৈতিক পক্ষসমূহ হুঁশে আসবে এবং নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করবে। দেশি-বিদেশি জনগণের জানমালের নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ আরও বেড়ে গেল। রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। তবে রাষ্ট্রের জেগে ওঠা যেন লক্ষ্যভেদী হয় পক্ষপাতদুষ্ট না হয়। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেন ব্লেম গেমে জড়িয়ে না পড়েন। বাংলাদেশ প্রতিদিন

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

জড়িতদের শেকড় খুঁজে বের করা হবে : শেখ হাসিনা

গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে সেই অপরাধীদের অবশ্যই শেকড় খুঁজে বের করা হবে।

রবিবার সকালে জাপানের স্টেট মিনিস্টার ফর ফরেন এফেয়ার্স সিইজি কিহারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, রেস্টুরেন্টে ভয়ঙ্কর পরিকল্পিত এই হামলার জন্য যারা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে আমরা অবশ্যই সেই অপরাধীদের শেকড় খুঁজে বের করবো।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা এর আগে গুপ্তহত্যা চালিয়েছে এবং পুরোহিত, ফাদারস ও ভিক্ষুদের টার্গেট করেছে। অপরাধে জড়িত অনেক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এবং জাপানের স্টেট মিনিস্টার ঐকমত্য প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ও জাপান ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।  এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জাপান ও ভারতে সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাপানী নাগরিকদের মৃতদেহের ময়না তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

আসুন দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলি : খালেদা জিয়া

কালবিলম্ব না করে আসুন আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলি’ বলে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

রবিবার বিকাল সোয়া ৪টায় গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

শুক্রবার রাতে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টেুরেস্টে সন্ত্রাসী হামলা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে হয়তো তারা কেউ থাকবে না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। তিনি বলেন, আমরা যে যাই বলি, যদি সন্ত্রাস দমন না করতে পারি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারি, তাহলে আমাদের কোনো অর্জনই টিকে থাকবে না।

খালেদা জিয়া বলেন, কাল বিলম্ব না করে আসুন আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে, দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

খালেদা জিয়া বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, গভীর বেদনাভরা মন নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে এসেছি। আমাদের জাতীয় জীবনের এক মহা সঙ্কটের সময় এখন। গত শুক্রবার রাতে রাজধানী ঢাকায় এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। কূটনৈতিক এলাকার কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও বোমা নিয়ে সন্ত্রাসী দল ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়। তারা গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে সেখানে অবস্থিত দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে।

তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিয়ান চালাতে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলি-বোমায় দুজন পুলিশ অফিসার নিহত ও অনেকে আহত হন। রাতেই সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে জিম্মি দেশী-বিদেশী ২০ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই পৈশাচিক সন্ত্রাসী হামলা এবং নারীসহ দেশী-বিদেশী নির্দোষ নাগরিকদের এভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা করার কোনো ভাষা নেই। আমরা গভীর বেদনাহত এবং ক্ষুব্ধ। কোনো অজুহাতেই শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সুস্থতার লক্ষণ নয়। এই বিকারগ্রস্ততার প্রতি আমরা তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।

সঙ্কটের শেকড় আরো গভীরে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কেবল আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবে না। এই সঙ্কটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। তিনি এই বিষয়টির দিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সতেচন হবার আহ্বান জানান।

সন্ত্রাসবাদকে ভয়াবহ জাতীয় সঙ্কট আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় গন্ডি পেরিয়ে সন্ত্রাস আজ বিশ্বের দেশে দেশে রক্ত ঝরাচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও আজ সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবল জর্জরিত। এটা আমাদের জন্য নতুন এক ভয়াবহ জাতীয় সঙ্কট। শুক্রবার রাতের ঘটনায় শুধু একটি রেস্তোরাঁ নয়, সারা বাংলাদেশ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা, আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সবার মিলিত প্রয়াসে আমাদেরকে এ সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারে না। এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরণের কাণ্ডজ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। তাই সংযম সাধনার মহিমান্বিত মাস রমজানে এই রক্তপাত প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে স্তম্ভিত করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রহীন দেশে, স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা এবং সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কারণগুলো দূর না করলে সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা যায়না। আমি মনে করি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেবল গণতান্ত্রিক পরিবেশই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে।

কোথায়ও কেউ নিরাপদ নয় উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতেই হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, শুধু শুক্রবার রাতের ঘটনাই নয়। সারা বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্ন মতের লেখক প্রকাশক-ব্লগার, খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের সংযত লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে আমরাও শঙ্কিত। কারণ এই ঘটনায় আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটি এবং সন্ত্রাসীদের সামর্থ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা এর আগে সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলার সাথে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এখন তা আর চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ আমাদের এই শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসের দানব গোপনে বেড়ে উঠেছে। তারা এখন পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ভয়ঙ্কর ছোবল হানছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যমান শত্রুর তুলনায় অদৃশ্য শত্রুর হামলা মোকাবিলা এবং তাদের দমন করা অনেক কঠিন। এই কথা জানি বলেই আমরা এতোটা উৎকণ্ঠিত।

খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহীনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শুক্রবার রাতের রক্তক্ষয়ী ঘটনার অবসান ঘটেছে শনিবার সকালে আমাদের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে। এতে সন্ত্রাসীদের হত্যা, সন্দেহভাজন হিসেবে আটক এবং জিম্মি দশা থেকে ১৩ জন দেশী-বিদেশী নাগরিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সাময়িক স্বস্তি পেয়েছি। এরজন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই জাতীয় জীবনের এমন সঙ্কটে তাদের সামর্থ ও অনিবার্য প্রয়োজন আরেকবার প্রমাণ করার জন্য।

বিএনপি প্রধান বলেন, এই অভিযানে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থা, অগ্নিনির্বাপক দল এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের যেসব সদস্য অসম সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকসহ কর্তব্যরত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর যে দুজন অফিসার উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে শুক্রবার রাতেই নিহত হন তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন দুজনের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এছাড়া যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া বলেন, ইতালির নয়জন জাপানের সাতজন এবং ভারতীয় একজন নাগরিক সন্ত্রাসীদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে অসহায় মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। এই বিদেশী নাগরিকেরা পোশাক শিল্পের ক্রেতা হিসাবে এবং ব্যবসা, চাকরি ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন। তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের নিজ নিজ পরিবার এবং ইতালি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সরকার এবং জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশী নাগরিক তিন জন সম্ভবনাময় তরুণ-তরুণীকে হত্যা করেছে। তাদের রুহের মাগফিতার কামনা করছি। শোকাহত পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

খালেদা জিয়া বলেন, এই বিপদের দিনে সহানুভূতি ও সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে যেসব বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তবে নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সে দেশের সরকার ও জনগণের। বর্তমানে আমরা সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি সেটা নিছক আইনশৃংখলা জনিত মামুলী কোনো সমস্যা নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বয় চন্দ্র রায় প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে গুলশানে হোটেল হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের হামলায় ২০ জন নিহত হয়। এর  মধ্যে নয়জন ইতালিয়ান, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি আমেরিকান ও দুজন বাংলাদেশি রয়েছেন। এর আগে জিম্মিদের উদ্ধার প্রচেষ্টাকালে দুই পুলিশ কর্মকর্তা বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম নিহত হন। পরে শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন থান্ডারবোল্টে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয় বলে তারা দাবি করেছে।